সারিকা সাবাহ: কথক থেকে গুলমোহর পর্যন্ত তারকাখ্যাতির অসাধারণ যাত্রা
সাবলীল সারিকা: কথক নৃত্য থেকে তারকাখ্যাতির পথে এক অনন্য যাত্রা
শুদ্ধ শৈলীর কথক নৃত্যশিল্পী সারিকা সাবাহ আজ বাংলা বিনোদন জগতের এক উজ্জ্বল মুখ। ছোটবেলা থেকেই তার ছিল এক স্বপ্ন—আকাশছোঁয়া তারকার মতো আলোয় আলোকিত হওয়ার। সেই স্বপ্নই একদিন তাকে নিয়ে এল ক্যামেরার সামনে, যেখানে শুরু হয় তার নতুন পরিচয়ের অধ্যায়।
প্রযুক্তির ক্লাসরুম থেকে ক্যামেরার আলোয়
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াকালীন ২০১৯ সালে তিনি অভিনয়ে নাম লেখান। প্রথমে কয়েকটি টিভিসিতে কাজ করলেও খুব দ্রুত নজর কাড়েন দর্শকের। তবে সত্যিকার অর্থে জনপ্রিয়তা আসে মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ধারাবাহিক ফ্যামিলি ক্রাইসিস-এ ‘ঝুমুর’ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। চরিত্রটি এতটাই হৃদয়ছোঁয়া ছিল যে, অনেকে সারিকাকে তার আসল নামের বদলে ‘ঝুমুর’ নামেই চিনে ফেলেন।
"গুলমোহর"-এ এক নতুন সকাল
সারিকার সাম্প্রতিক সাফল্য এসেছে সৈয়দ আহমেদ শাওকীর পরিচালনায় চর্কির ওয়েব সিরিজ গুলমোহর-এর মাধ্যমে, যা মুক্তি পেয়েছে ১৫ মে। অভিনয়ের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও সারিকা জানান, শুটিং সেটই ছিল তার শেখার শ্রেষ্ঠ স্কুল। “গুলমোহরের অডিশনই যেন এক নতুন যাত্রার সূচনা ছিল,” স্মৃতিচারণ করেন তিনি। রাজবাড়ির শুটিং লোকেশনটি ছিল তার কাছে অন্যতম প্রিয় অভিজ্ঞতা।
শাওকীর সেটে নিয়ম শৃঙ্খলার প্রতি গুরুত্ব—বিশেষ করে দৃশ্যের মাঝে বিরতির সময় সম্পূর্ণ নীরবতা পালন—তার মন ছুঁয়ে যায়। “পুরোটা যেন একটা ট্রিপ ছিল, কিন্তু একইসঙ্গে শিখিয়েছে শিল্পের শৃঙ্খলা কীভাবে রক্ষা করতে হয়,” বলেন সারিকা। সহ-অভিনেতা মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ও শিশু শিল্পীদের প্রশংসাও করেন তিনি, যারা সবাই মিলে একটি চমৎকার টিম তৈরি করেছিলেন।
ঝুমুরের স্মৃতি ও তার ছায়া
‘ঝুমুর’ চরিত্রের সঙ্গে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে পথচলা সারিকাকে চরিত্রটির সঙ্গে আবেগের বন্ধনে বেঁধে ফেলে। “ঝুমুর একদম নিষ্পাপ, দৃঢ়চেতা এবং শারীরিকভাবে অনেক এক্সপ্রেসিভ—সে যেন আমার আত্মার একটা অংশ,” বলেন সারিকা। ফ্যামিলি ক্রাইসিস দলের সঙ্গে ছিল এক পরিবারসদৃশ সম্পর্ক।
তবে একই ধরনের চরিত্রে বারবার কাজ করতে করতে যখন নিজেকে একঘেয়ে মনে হতে থাকে, তখন তিনি ২০২৩ সালে টেলিভিশন থেকে বিরতি নেন। তার লক্ষ্য ছিল বৈচিত্র্যময় চরিত্রের সন্ধান—একঘেয়ে প্রস্তাব আর নয়।
রূপান্তরের এক বিরতি
এই সময়টাতেই সারিকা নিজের স্বাস্থ্য ও জীবনের গতি বদলানোর সিদ্ধান্ত নেন। সাত মাসের বিরতিতে তিনি ওজন কমান ২৪ কেজি, একান্ত নিজস্ব উদ্যোগে—নিজে রান্না করে খাওয়া, জুম্বা, এবং যোগাভ্যাসের মাধ্যমে। “এটা কোনো চরিত্রের জন্য নয়—আমি নিজেকে সুস্থ, সচল ও আত্মবিশ্বাসী দেখতে চেয়েছিলাম,” বলেন তিনি। একই সময়ে তিনি নিজের ডিগ্রিও সম্পূর্ণ করেন, জীবন ও ক্যারিয়ারকে এক নতুন ছন্দে ফিরিয়ে আনেন।
আগামীর পথে আত্মবিশ্বাসী পদক্ষেপ
এই মুহূর্তে সারিকা তার জীবনে শরীর-মন ও কর্মের মধ্যে একটি সুষম সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলো নিয়ে তিনি অত্যন্ত আশাবাদী। কথক নৃত্যের সংবেদনশীলতা, ঝুমুরের সরলতা ও গুলমোহরের শৈল্পিক কঠোরতা—সব মিলিয়ে তার ভেতরে গড়ে উঠেছে এক বলিষ্ঠ শিল্পীসত্তা।
সারিকার যাত্রা যেন তারই চরিত্রদের মতো—সংবেদনশীল, পরিবর্তনশীল, এবং পুরোপুরি মানবিক। একজন শিল্পীর যে আত্মপরিচয় প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাপিয়ে যেতে চায়—সারিকা সাবাহ ঠিক তেমনই এক উদাহরণ।
Comments
Post a Comment