জয়া ও শারমিন দখলে নেন মঞ্চঃ
হেক্সিসল
ও মৃত্যুর গন্ধে আচ্ছন্ন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এক সময়ের গর্বিত
মহানগর আজ নিস্তব্ধ, এক
অদ্ভুত ইতিহাসের প্রহরে — কোভিড-১৯ মহামারী। এই
সময়েই সমাজের সব বাধা পেরিয়ে
মধ্যবিত্ত নারী ও তার
গৃহসহায়িকার অদ্ভুত এক বন্ধুত্ব জন্ম
নেয়, যা অবিশ্বাস্য হলেও
মানবিকতার এক অনন্য নিদর্শন
হয়ে ওঠে। পিপলু আর
খানের হৃদয়স্পর্শী চলচ্চিত্র "জয়া আর শারমিন" যেন আত্মশুদ্ধির এক
প্রতিফলন।
মিডিয়ার
স্টুডিওতে, একদিকে ব্ল্যাক কফি, অন্যদিকে রঙ
চা হাতে মুখোমুখি বসলেন
চলচ্চিত্রের দুই মুখ্য চরিত্র—
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জয়া আহসান ও
প্রথিতযশা থিয়েটারশিল্পী মোহসিনা আখতার। আবেগে পরিপূর্ণ আলাপচারিতায় উঠে আসে অতীত,
বর্তমান এবং ভবিষ্যতের নানা
দিক।
"আমরা
মহামারী থেকে কিছুই শিখিনি,"
গভীর হতাশায় বলেন জয়া। "প্রকৃতির
বিরুদ্ধে যাওয়া, সহানুভূতি ও সহনশীলতা না
থাকা – এই ভুলগুলো আবার
করছি আমরা।" তবে এই চলচ্চিত্রে
ফিরে যাওয়া তাদের সেই একাকীত্ব ও
সহমর্মিতার দিনগুলোকে আবার জাগিয়ে তোলে।
জয়া
বলেন, “আমি বিস্মিত হয়েছি
দর্শকদের কাছ থেকে এত
ভালোবাসা পেয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসাসূচক বার্তাগুলো হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।”
মোহসিনা
আখতারের জন্য এটি চলচ্চিত্রে
এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ – যিনি ইতোমধ্যে থিয়েটারে
আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। “পিপলু ভাই আমাকে সম্পূর্ণ
স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমি ভাবতেই পারিনি
তিনি আমাকে স্টেজের মতো করে নিজস্বভাবে
চরিত্রে প্রবেশ করতে বলবেন,” বলেন
তিনি।
চলচ্চিত্রের
সেট এমনভাবে সাজানো ছিল, যেখানে ক্যামেরার
উপস্থিতি প্রায় অদৃশ্য। ফলে চরিত্রে ঢুকে
যাওয়াটা হয়ে ওঠে স্বাভাবিক।
জয়া বলেন, "আমরা যেন ক্যামেরার
সামনে চরিত্রে অভিনয় করছিলাম না, আমরা নিজেরাই
হয়ে উঠেছিলাম জয়া ও শারমিন।"
তীব্র
বিধিনিষেধ ও সীমিত প্রযুক্তিগত
সহযোগিতার মধ্যেও তারা শুটিং সম্পন্ন
করেন – মেকআপ আর্টিস্টও ছিলেন না। তবু সেই
অভিজ্ঞতাকে তারা স্মরণ করেন
গভীর আবেগ নিয়ে।
বর্তমান
সময়ে যখন প্রগতিশীল সংস্কৃতি
ও শিল্পীরা ডানপন্থী শক্তির আক্রমণের মুখে, তখন মোহসিনার সোজাসাপ্টা
বক্তব্য: "প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের
শিল্প, সামাজিক কথোপকথন এবং মানবিক আচরণের
মাধ্যমে আমাদের সহনশীলতা ছড়িয়ে দিতে হবে।"
অন্যদিকে,
জয়া আহসান বহুদিন ধরে পশু নির্যাতনের
বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। তিনি
বলেন, "আমি যতটা কৃতিত্ব
পাই, তার চেয়ে অনেক
বেশি কৃতিত্বের দাবিদার হলো সেই মানুষগুলো
যারা প্রাণীদের জন্য জীবন উৎসর্গ
করেছেন।"
ঈদ-উল-আযহার প্রাক্কালে
জয়ার অনুরোধ: “কোরবানির পশুগুলোর প্রতি দয়া দেখান। অপ্রয়োজনীয়
কষ্ট না দিয়ে তাদের
আরামদায়ক অবস্থায় রাখুন – এটাই এই উৎসবের
প্রকৃত চেতনা।”
"জয়া
আর শারমিন" – C te
Cinema ও Applebox
Films এর যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত
– যে শুধু বক্স অফিস
নয়, মানবিক মূল্যবোধের কারণে দর্শকের মনে গেঁথে থাকবে
দীর্ঘকাল।
Comments
Post a Comment