চলচ্চিত্রে দুর্গাপূজার নানা রূপ


দুর্গাপূজা নিজেই এক চলচ্চিত্রময় উৎসব। রঙিন প্রতিমা, ঢাকের তালে রাতভর উৎসব, আর আলোকিত প্যান্ডেল যেন এক বিশাল সিনেমার দৃশ্যপট। তাই বহু দশক ধরে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে দুর্গাপূজা কেবল উৎসব নয়—বরং আবেগ, সংস্কৃতি ও সমাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।

প্রাচীন বাংলা সিনেমায় পূজা মানেই ছিল গ্রামীণ জীবনের প্রাণ। বিমল রায়ের "দেবদাস" (১৯৫৫)-এ যেমন পারোর বাড়ির পূজা দৃশ্য আনন্দ ও বেদনার দ্বন্দ্বকে ফুটিয়ে তোলে। ঋত্বিক ঘটকের "মেঘে ঢাকা তারা" (১৯৬০)-এ ঢাকের শব্দ মিশে যায় নীটার কান্নায়, দেবী হয়ে ওঠেন ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতীক।



সত্যজিৎ রায় পূজা-নিমজ্জনকে ধরেছিলেন বিমূর্ত শিল্পের মতো, আবার গৌতম ঘোষের "অন্তর্জলী যাত্রা" (১৯৮৭)-তে দেখা যায় সমাজের ভণ্ডামি—যেখানে দেবীকে পূজা করা হয়, কিন্তু বাস্তব নারীদের অবহেলা করা হয়।

সমসাময়িক ছবিতে পূজা আরও পারিবারিক ও নগর জীবনের প্রতীক। ঋতুপর্ণ ঘোষের "উৎসব" (২০০০)-এ পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার প্রসঙ্গ দেবীর চোখের সামনেই ঘটে। সুজয় ঘোষের "কাহানি" (২০১২)-তে দেবী দুর্গার অসুরবধ যেন আধুনিক নারী বিদ্যার প্রতিশোধের প্রতিচ্ছবি।


বলিউডেও পূজা জায়গা করে নিয়েছে আলাদা করে। সঞ্জয় লীলা ভন্সালির "দেবদাস" (২০০২)-এর “ডোলা রে ডোলা” দৃশ্য যেমন উৎসবকে করে তুলেছে এক মহাকাব্যিক মুহূর্ত। আবার "লুটেরা" (২০১৩)-তে পূজাকে দেখা যায় নিভৃত, বিষণ্ন আবহে।

অন্যদিকে কৌশিক গাঙ্গুলীর "বিসর্জন" (২০১৭)-এ সীমান্ত পেরোনো প্রতিমা হয় সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক। সৃজিত মুখার্জির "উমা" (২০১৮) পুরো একটা পূজা তৈরি করে দেয় এক মরণাপন্ন শিশুর জন্য—যা সিনেমা ও পূজার অলৌকিক সাদৃশ্যকে আরও স্পষ্ট করে।



"অসুর" (২০২০)-এ প্রতিমা গড়ার গল্পই হয়ে ওঠে শিল্প, অহংকার ও পতনের রূপক।

সিনেমার জন্য দুর্গাপূজা এত আকর্ষণীয় কারণ এর ভেতরেই আছে বৈপরীত্য—অধিক্যের মাঝেও ক্ষণস্থায়ীতা, আনন্দের মাঝেও বিদায়ের বেদনা। তাইই তো প্রতিবার, পর্দায় বা বাস্তবে, দুর্গাপূজা আমাদের নতুন করে মুগ্ধ করে।

*Photo: Collected

#দুর্গাপূজা #বাংলাচলচ্চিত্র #সিনেমাআরউৎসব #সংস্কৃতি


 

Comments

Popular posts from this blog

CCL Digital Set Top Box

Alita: Battle Angel (2019) 375MB 480P WEB-DL Dual Audio [Hindi-English]